Home গল্প সোনার পৈতা

সোনার পৈতা

317
0

বৌবাজারের গা ঘেঁষে উত্তর দিকে যে লম্বা গলিটা গেছে সেটা ধরে এগিয়ে গেলেই নাকি অফিসটা বাঁদিকে পরবে। আমি নিজেই যেতে পারতাম। লোকটা নাছোড়বান্দা। দুশ টাকার বিনিময়ে আমাকে নিয়ে যাবে। এটাই নাকি নিয়ম সেখানে। লোকটার পিছু পিছু হাঁটছিলাম। কথা বলা তো দূরের কথা পাশাপাশি হাঁটতেই কেমন যেন ঘেন্না করছিল। বলছিল আরও দুশ টাকা দিলে একদম পছন্দসই ‘মাল’ এনে দেবে। আমি বললাম, আপনি আমার সামনে থাকুন। আমি পিছু পিছু আসছি। দোকানপাট দেখতে দেখতে যাব। রাস্তার দুধারে সার দিয়ে দোকান। পান বিড়ির দোকান থেকে শুরু করে ফুলের দোকান। একটা দোকানে আবার ঠাকুর দেবতার ছবি ছিল অজস্র।

এবার আপনি আসতে পারেন। আপদ বিদায় করে ছোট্ট অফিস ঘরটাতে ঢুকে নিজেই একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়লাম। টেবিলের অপর পাশে একজন গম্ভীর মুখ করে বসে আছে। ভাবখানা এমন যেন এক্ষুনি বৃষ্টি আসবে অথচ হাতে ছাতা নেই। হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কেমন আছেন?” এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না; লোকে বরং বিরক্ত হয়। প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই জিজ্ঞেস করেন, “কী চাই বলুন?” বললাম, একটি প্রকল্পের ব্যাপারে কিছু তথ্যের প্রয়োজন ছিল।

এটা সেটা নিয়ে কথা হচ্ছিল। কথা ঠিক নয়, প্রায় একতরফা অভদ্রতা যেন আমার তরফ থেকে। এমনটাই আমার মনে হচ্ছিল। কারণ ভদ্রলোক অনিচ্ছায় চিবিয়ে চিবিয়ে কিছু তথ্য দিচ্ছিলেন। যেন আমাকে দয়া করছেন। অথচ এনাদের কাজই হলো আবাসনের মেয়েদের জীবন ধারণে সাহায্য করা। আমিও সেই কারণেই তথ্যগুলো চাইছিলাম। ভালো কিছু প্রকল্প করতে গেলে অনেক তথ্যের প্রয়োজন। তথ্য থাকলে রিসোর্স এলোকেট করতে সুবিধা হয়। বিশেষ করে যখন সীমিত রিসোর্স থাকে। আমার অভদ্রতা আর ভদ্রলোকের বিরক্তি – এমন মধুর কথোপকথনের মাঝখানে হটাৎ করে একটি মেয়ে এসে একটা খবরের কাগজ নিয়ে পাশের টেবিলটার সামনে একটি চেয়ারে বসে পড়ল। আমি একবার তাকিয়ে আবার আমাদের কথায় ফিরে গেলাম।
তারপর আর খেয়াল করিনি। কথাবার্তায় মগ্ন ছিলাম। হঠাৎ কানে এল মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে। আর ‘সোনার পৈতা সোনার পৈতা’ করে কী যেন বলতে চাইছে অথচ হাসির জন্য আর বলে উঠতে পারছে না। খানিকটা বিরক্ত হলাম। আসলে সামনের ভদ্রলোকের উপর যে বিরক্তিটা এতক্ষন ধরে জমা হচ্ছিল সেটাই উগরে দিলাম মেয়েটার উপর। জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে? এমন করে হাসছো কেন?” মেয়েটা একটু সাহস পেয়ে উত্তর দিতে চেষ্টা করলো, “একদিন ব্রা…পৈতা।…..”

কিছুতেই হাসি থামাতে পারছে না। বলবে কি করে? সামনের ভদ্রলোক এবার খিস্তি মেরে উঠল, “যা এখান থেকে। অসভ্য মেয়ে কোথাকার!” মেয়েটা হাসতে হাসতে চলে গেল। আমার আর জানা হলো হলো না কী নিয়ে যে এতো হাসি পেয়েছিল ওর।

বাড়ি ফিরে এলাম। বেশ বিরক্ত হয়েই। ভদ্রলোককে যে চটকানা মারতে ইচ্ছে হয়েছিল সে না বললে ভুল বলা হবে। কিন্তু এখন আর রাগ বা বিরক্তি নেই। এখন এক রাশ কৌতূহল হচ্ছে মেয়েটাকে নিয়ে। কী নিয়ে হাসছিল এত? দুটো শব্দই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলাম- ব্রা আর পৈতা। আরও কি সব বলছিল সেদিন যদি সোনার পৈতা…!” কিছু বুঝতে পারিনি। কিন্তু ব্রায়ের সাথে পৈতার সম্পর্ক কি? ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছি সে আবাসনেরই মেয়ে। কেমন একটা জেদ চেপে গেল হঠাৎ। আমাকে জানতেই হবে কেন এমন করে হাসছিল!

(অসমাপ্ত)

Previous articleভারতবর্ষ
Next articleঅভিমান